01723191267 jamiaislamiaimambari@gmail.com

ব্রেকিং নিউজ


img বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া ইমামবাড়ী একটি ঐতিহ্যবাহী জাতীয় ও ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিগত কয়েক দশক যাবত অত্র অঞ্চলে পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহের বিধান অনুযায়ী দ্বীনি শিক্ষা প্রদান করে আসছে। ১৯৪৪ ইংরেজি সনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর হইতে আল্লাহ তাআলার অসীম দয়ায় হক্কানী বিশিষ্ট ওলামা ও মাশায়েখগনের সুপরামর্শ ও দেশবাসীর উদার সাহায্যে পরিচালিত হয়ে আসছে। ইসলামী শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে অত্র প্রতিষ্ঠানটি দেশেবিদেশে বিশেষভাবে সুপরিচিত। বর্তমানে ৩৫ জন সুদক্ষ শিক্ষকমন্ডলী দ্বারা বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ বোর্ডের সিলেবাস অনুসারে পর্যায়ক্রমে চারটি ভাষা : যথা আরবি, বাংলা, ইংরেজি ও উর্দু এর মাধ্যমে, হেফজ কোরআন মাজিদ ও কেরাত বিভাগসহ শিক্ষার নিম্নতম ক্লাস হইতে মেশকাত জামাত পর্যন্ত সুচারুরূপে চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে আটশতাধিক ছাত্র-ছাত্রী অধ্যায়নরত আছে। এই আদর্শ জামেয়া প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর হইতে অদ্যাবধি বহু জ্ঞানপিপাসু নিজ নিজ যোগ্যতা অনুসারে জ্ঞান অর্জন করে দেশে-বিদেশে সাফল্যের সঙ্গে জাতীয় উন্নতির লক্ষ্যে দ্বীনি শিক্ষা ও ইসলামের বহুবিধ খেদমত আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন। জামিয়া পুরুষদের শিক্ষার পাশাপাশি মহিলাদেরকে ধর্মীয় উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার লক্ষ্যে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে ২ একর জমির উপর ভিট স্থাপন করত পৃথক মাদরাসাতুল বানাত এর কাজ চালু করেছে। বর্তমানে ৪০০ জন ছাত্রী অধ্যায়নরত আছে। জামিয়া বর্তমানে মাদরাসাতুল বানাত সহ চার একর জায়গার উপর স্থাপিত। দাওরায়ে হাদিস চালু: ১৯৭৪ সনে শায়খে ইমামবাড়ী আল্লামা আব্দুল মুমিন রাহমাতুল্লাহি আলাইহি প্রথম হাদিসের দরস চালু করেন। বালিকা শাখা চালু: ১৯৯৭ ইংরেজি সনে আল্লামা আব্দুল মুমিন রাহ. চালু করেন।আল্লাহতালা এই জামিয়াকে দিন দিন উন্নতি দান করুন। আর মাদ্রাসায় সাহায্যকারীদের দান কে কবুল করূন। আমীন।

তাহরিকে এ’লায়ে কালিমাতুল্লাহ

... mso-hansi-font-family: SutonnyMJ; mso-bidi-language: BN;">জামিয়ার ইতিহাস-ঐতিহ্য

প্রেক্ষাপট

ইংরেজদের দুইশত বছরের অপশাসনে এদেশে ইসলামের বাতি নিবু নিবু করছিল। আলেম-উলামা তৈরির কেন্দ্র মাদ্রাসা-মসজিদগুলো শেষ করে দিয়েছিল ইংরেজরা। ফলে গোটা দেশে আলেম-উলামার সংখ্যা একবারেই কম ছিল। হবিগঞ্জ অঞ্চলে মাও. আসাদুল্লাহ, মাও. আমির আলীসহ মাত্র কয়েকজন আলেমের নাম পাওয়া যায়। অবশ্য ১৮৬৬ সালে দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠার পর কিছু কিছু আলেম তৈরী হওয়া শুরু হয়। এছাড়া এতদ অঞ্চলে দ্বীনী কোনো প্রতিষ্ঠানও ছিলনা।

প্রতিষ্ঠাতা ও প্রতিষ্ঠাকাল
এহেন পরিস্থিতিতে একটি দ্বীনি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন এলাকার মুরুব্বিগণ। তাদের অন্যতম হলেন মৌলভী ফিরুজ মিয়া চৌধরী রাহ. তিনি একজন সহজ সরল মুখলিছ বান্দা ছিলেন। তিনি আরো কয়েকজন মুরুব্বি নিয়ে হাজী মফিজ উদ্দীন চৌধরী সাহেবের কাছে গিয়ে মিনতী করে মাদ্রাসার জন্য জায়গা চান। হাজী সাহেবের কোনো সন্তানাদী ছিলনা। তখন মাদ্রাসার বর্তমান জায়গাটি নিরব জঙ্গলের মত ছিল, হাজী সাহেব বল্লেন এই জায়গাতে কি কেউ আসবে! যাক আলহামদুলিল্লাহ তাদের প্রস্তাবে তিনি রাজী হলেন। এবং তাঁর ও এলাকার অন্যন্যাদের সহায়তায় মৌলভী ফিরুজ মিয়া চৌধরী রাহ. বিশ^বিখ্যাত দারুল উলুম দেওবন্দের অনুসরণ ও অনুকরণে খাঁটি আলেম ও মুহাফিজ তৈরির মহান ব্রত নিয়ে ১৯৪৪ সালে মাদ্রাসার ভিত্তি স্থাপন করেন। অবশ্য শায়খ আব্দুল আজিজ আতর মিয়া (বয়স ৯০) যিনি মাদ্রাসার প্রথম ভর্তিপ্রাপ্ত ছাত্রদের একজন, বর্তমানে মাদ্রাসার উস্তায, তাঁর দেওয়া তথ্য মতে এর আরো দুই তিন বছর আগ থেকেই এটি মকতব হিসেবে চলে আসছিল। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই জামেয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া ইমামবাড়ী মাদ্রাসা এতদাঞ্চলের ইলমুল ওহীর শিক্ষা প্রচার ও প্রসারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে আসছে। র্শিক, বিদআত ও কুসংস্কারাচ্চন্ন সমাজে শিক্ষার আলো বিস্তার সর্বোপরি তাহজিব তামুদ্দুনের লালন ও বিকাশে জামেয়া অতন্দ্র প্রহরীর ভুমিকা পালন করছে।     

এ দ্বীনী দরসগাহ-এর প্রতিষ্ঠায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে যারা স্মরণীয় হয়ে আছেন তারা হলেন:

জনাব আলহাজ¦ আব্দুল ওয়াহাব চৌধরী, আলহাজ আব্দুর রহিম চৌধরী, আলহাজ আব্দুল হামিদ চৌধরী, শেখ ছানাওয়ার মিয়া, আলহাজ¦ আফসর মিয়া, কাজল মিয়া,আব্দুল জব্বার, আলহাজ¦ উসমান গণী, মুহাম্মদ সাজন খান, আলহাজ¦ মৌলদ হুসেন চৌধরী, আলহাজ¦ তারা মিয়া চৌধরী, আলহাজ¦ জহুর  উদ্দীন চৌধরী, মাও. আব্দুস সাত্তার, মাওলানা মুজাফ্ফর (গেদু মিয়া) প্রমুখ।

প্রতিষ্ঠাকাল ১৯৪৪ থেকে ২ বছর মৌলভী ফিরুজ মিয়া রাহ. ও অন্য দুজন নোয়াখালির  হুজুর  উর্দূ কায়দা ও অন্যন্যা ইবতেদায়ী কিতাবাদি পড়াতেন। মাদ্রাসার প্রথম ভর্তীহওয়া সৌভাগ্যবান ছাত্ররা হলেন: শায়খে ইমামবাড়ি আল্লামা আব্দুল মুমিন রাহ., শায়খ আব্দুল আজিজ (আতর মিয়া) (তিনি বর্তমানে জামেয়ার উস্তায) মাওলানা জাফর আহমদ, মৌলভী আব্দুর রহমান, মৌলভী এখলাছ মিয়া, মৌলভী ওয়াযুদ্দীন, মৌলভী উপরি মিয়া, মো: কিতাব আলী, নাজামত উল্লাহ ।

অতপর হযরত মাওলানা ক্বারী মিছবাহুজ্জমান সাহেব দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে ফারেগ হয়ে আসলে উনাকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়, তিনি পান্দামা, করীমাসহ আরো কিছু উপরের কিতাব পাঠদান শুরু করেন। অতপর মাওলানা আব্দুশ শহীদ সাহেব দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে ফারেগ হয়ে আসলে তাকে মুহতামিম হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়, তিনি আরো কয়েকজন বিদগ্ধ আলেমকে উস্তায হিসেবে নিয়োগ দেন। এবং পর্যায়ক্রমে মিযান, নাহুমির, হেদায়াতুন নাহু, কাফিয়া ও শরহে জামী ইত্যদি জামাত চালো করেন। তখন আরো যারা উস্তায হিসেবে ছিলেন তারা হলেন: মাওলানা মিছবাহুজ্জমান, মাওলান আব্দুল বাড়ি, মাওলানা আব্দুল করিম ও মাওলানা আব্দুল হাই শায়খে বালিধারী। মাও. আব্দুল করীম, মাও. আশরাফ আলী রাহ. প্রমূখ।

জামিয়ার প্রথম পাকা ঘর নির্মান

ইমামবাড়ি বাজারের উত্তর পার্শে এলাকার ৭ গ্রামের মানষের ঈদগাহ ছিল। সেটির মুতাওয়াল্লী ছিলেন পুরানগাঁও গ্রামের,হাজী আব্দুর রহমান সাহেব। ঈদগাহ পাকা করার জন্য ইট বানানো হয়েছিল এক পর্যায়ে কোনো একটি বিষয় নিয়ে মুরুব্বিদের মাঝে বিতর্ক সৃষ্টি হয় তখন জনাব ইসহাক সাহেব প্রস্তাব করেন। বিতর্কের প্রয়োজন নেই আমরা এই ইট মাদ্রাসায় দিয়ে দেই এবং ঈদ জামাত মাদ্রাসার মাটেই পড়ব। এই প্রস্তাবে সবাই সম্মত হন। সেই ইট দিয়ে মাদ্রাসার প্রথম পাকা ঘর বানানো হয়।

দাওরায়ে হাদীস চালো

১৯৭৪ সালে ৬জন ছাত্র নিয়ে সর্বপ্রথম হবিগঞ্জ জেলার মধ্যে অত্র জামেয়ায় দাওরায়ে হাদীস চালো হয়। বুখারী শরীফের দরস প্রদান করেন শায়খে ইমামবাড়ি আল্লামা আব্দুল মুমিন রাহ.। আর তিরমিযী শরীফের দরস প্রদান করতেন আল্লামা গোলাম কুদ্দুস সাহেব, বানিয়াচং। তখন হাদীসের দরস সম্পন্ন করে  যেসব ছাত্ররা দস্তারে ফযীলত বা পাগড়ি লাভ করেছিলেন তারা হলেন: ১.মাওলানা মনসুর, ধুলিয়া, ২.মাওলানা আব্দুল হামিদ,ঘাটুয়া, ৩.মাওলানা আব্দুল আলীম, গোজাখাইর, ৪.মাওলানা ইসমত উল্লাহ,কদুপুর, ৫.মাওলানা আব্দুল জলীল, নেত্রকোনা ৬.মাওলানা খলিলুর রহমান, বানিয়াচং।

জামিয়ার মহিলা শাখার সূচনা

১৯৯৬ সালে অত্র অঞ্চলের মেয়েদেরকে দ্বীনী শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলার লক্ষে জামেয়ার উত্তর পশ্চিম পার্শে স্বতন্ত্র ২ একর ভুমিতে প্রতিষ্ঠা করা হয় মহিলা শাখা। এতে ভুমি প্রদান করেন আলহাজ¦ মনাফ মিয়া, আলহাজ¦ কবির মিয়া। ভবন নির্মানে বৃহৎ দান করেন আলহাজ¦ ছমরু মিয়া।

বর্তমানে দেশের স্বনামধন্য আলেম উলামার সুষ্ঠ দিক নির্দেশনা ও এলাকাবাসীর বদান্য অর্থানুকূল্যে পরিচালিত জামেয়ায় হিফজুল কুরআন শাখা ও নুরানী শিশু শ্রেণী থেকে সর্বোচ্চ জামাত দাওরায়ে হাদীস (টাইটেল) পর্যন্ত তালিম ও তরবিয়্যতের কাজ চলছে। আরবি, বাংলা, উর্দূ ও ইংরেজী ভাষা শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আবাসিক ও অনাবাসিকসহ ৪ শতাধিক ছাত্র এবং আরো ৩ শতাধিক ছাত্রির সমন্বয়ে মাদ্রাসাতুল বানাত এর কার্যক্রম সুচারু রূপে চালু রয়েছে। ছাত্র ছাত্রিদেরকে আধুনিক প্রযুক্তিতে দক্ষ করে গড়ে তুলার জন্য এবং হালালভাবে জিবিকা উপার্জনের সহযোগিতার জন্য ২০২১ সালে কম্পিউটার ও সেলাই প্রশিক্ষণের আলাদা দুটি বিভাগ চালু করা হয়।

উক্ত প্রতিষ্ঠানে যেসকল বুজুর্গানে দ্বীনের রয়েছে বিশেষ অবদান তারা হলেন:  মাওলানা ক্বারী মিছবাহুজ্জমান রাহ. মাওলানা আশরাফ আলী, মাওলানা শায়খ আলাউদ্দীন, মাওলানা উসমান রাহ., আল্লাম আব্দুর রহমান শায়শে ধুলিয়া রাহ., মাওলানা রমিজ উদ্দীন রাহ., মাওলানা গোলাম ক্দ্দুুস রাহ., মাওলানা আব্দুল বাড়ি রাহ., মাওলানা গোলাম কুদ্দুস, মাওলানা আব্দুল করিম, মাওলান শরীফ উদ্দান, খরকি, মাওলানা শায়খ শরফ উদ্দীন। আল্লাহ তায়ালা প্রতিষ্ঠানটিকে কবুল করুন। আমীন!

©Copyright. All Rights Reserved